মো. আবু হানিফ, গ্রাম : ঘোলদাড়ি, উপজেলা : আলমডাঙ্গা, জেলা : চুয়াডাঙ্গা
প্রশ্ন : লাউয়ের বয়স্ক পাতায়-বাদামি-হলুদ দাগ হয়, ধীরে ধীরে পাতা পুড়ে যায়, কী করলে সমাধান পাব?
উত্তর : লাউ গাছের এ ধরনের সমস্যা সারকোস্পোরা নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। এ রোগে পাতায় পানি ভেজা দাগের মতো ছোট ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়। দাগগুলো একত্রে বড় হয়ে বাদামি রঙ ধারণ করে। পরে আক্রান্ত পাতাগুলো শুকিয়ে যায়। এ রোগ প্রতিকারে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ১ গ্রাম ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে লাউ গাছে সঠিক নিয়মে স্প্রে করতে হবে। তবেই আপনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
মো. হেলাল উদ্দীন, গ্রাম : গৌরাঙ্গপুর, উপজেলা : মোহনপুর, জেলা : রাজশাহী
প্রশ্ন : পানের পাতায় কালো পানি ভেজা দাগ হয়ে আস্তে আস্তে পচে যায়। কী করলে উপকার পাব?
উত্তর : সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে নিচের পাতার আগায় বা কিনারায় প্রথমে হলুদ বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। দাগ আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে যেতে থাকে। আবার তাপমাত্রা বেশি হলেও এ রোগ বেড়ে যায়। এ ধরনের সমস্যায় কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলে সুফল পাবেন।
মো. জয়নাল উদ্দীন, গ্রাম : লক্ষীরপাড়, উপজেলা : বিশ্বম্বরপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন : স্ট্রবেরির পাতায় প্রথমে বাদামি, পরে কালো দাগ পড়ে, এর প্রতিকার কী?
উত্তর : স্ট্রবেরির এ সমস্যাটিকে পাতায় দাগ পড়া রোগ বলে। ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ প্রতিকারে ফেনামিডন ও মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে আপনি সুফল পাবেন।
মো. গোলাম মোস্তফা, গ্রাম : পিরোজপুর, উপজেলা : মেহেরপুর সদর, জেলা : মেহেরপুর
প্রশ্ন : আমার আম্রপালি ও হিমসাগর আমগাছে সাদা ছত্রাকের মতো দেখা যাচ্ছে । বর্তমানে গাছের কাণ্ড ও পাতায় ছড়িয়ে পড়ছে । আমি কিভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি?
উত্তর : আক্রমণের বর্ণনা অনুযায়ী মনে হচ্ছে আপনার আম গাছে মিলি বাগ নামক পোকার আক্রমণ হয়েছে। ব্রাশ দ্বারা সাদা বস্তু/ পোকা সরিয়ে ফেলে কিংবা আক্রান্ত পাতা ও ডগা সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। গুঁড়া সাবান (হুইল/জেট পাউডার) পানিতে (৫ গ্রাম/লি) মিশিয়ে স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে। তাহলেই আপনি উপকার পাবেন।
মো. শরিফ উদ্দীন, গ্রাম : পুরনাপাইল, উপজেলা : ক্ষেতলাল, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : এক বছর আগে আমি একটি আনারের কলমের চারা কিনে রোপণ করি এবং গাছে প্রচুর ফুল আসে। কিন্তু ফুল টিকে না এবং ফলও হয় না। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
উত্তর : বাংলাদেশে ডালিমের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। ডালিমের ক্ষেত্রে কলমের চারা ভালো। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার, পানি ও পরিচর্যা প্রয়োজন। চারা কলম লাগানোর পর প্রথম ৩ বছর গাছে কোন ফুল ও ফল ধরতে দেয়া যাবে না। বরং ফুল এলে তা অপসারণ করতে হবে। গাছের বয়স অনুযায়ী সারের মাত্রা প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে। ১ম কিস্তি বর্ষার শুরুতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ইউরিয়া ও এমওপি অর্ধেক করে। ২য় কিস্তি ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ইউরিয়া ও এমওপির বাকি অর্ধেকসহ সব সার। ৩য় কিস্তি শীতের শেষে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে আনারের চাষ করলে আশা করা যায় আপনি আপনার কাক্সিক্ষত ফল পাবেন।
মুক্তা আকতার, গ্রাম : দক্ষিণভাদারতিল, উপজেলা : কালীগঞ্জ, জেলা : গাজীপুর
প্রশ্ন : লাউ গাছের পাতায় সাদা সাদা গুঁড়া দেখা যাচ্ছে। কী ব্যবস্থা নিলে উপকার পাব?
উত্তর : লাউ গাছের এ সমস্যাটিকে পাউডারি মিলডিউ বলে। এ রোগে পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের আবরণ দেখা যায়। আক্রমণ বেশি হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে প্রপিকোনাজল গ্রুপের ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাবেন। এছাড়া পরবর্তীতে আগাম বীজ বপন, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার এবং সুষম সার ব্যবহার করলে এ সমস্যা থেকে আপনি সুরক্ষা পাবেন।
মো. মিনহাজুল ইসলাম, গ্রাম : ফলিয়ামারি, উপজেলা : ময়মনসিংহ সদর, জেলা : ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : আমার গরু ৮ মাসের গর্ভবতী। নড়াচড়া করতে চায় না। বসে থাকলে উঠতে পারে না। কিছু খেতে চায় না। এ অবস্থায় করণীয় কী?
উত্তর : গাভীর মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর হয়েছে। গাভীকে শিরার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট প্রয়োগ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় গাভীকে ক্যালসিয়াম প্রিপারেশন (ক্যালপ্লেক্স) খাওয়াতে হবে। দুগ্ধ জ্বর হলে গাভী যাতে কাত হয়ে না শোয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ একপাশে ভর করে শুয়ে থাকলে নিউমোনিয়া হতে পারে।
শফিকুল ইসলাম, গ্রাম : বাকতা, উপজেলা : ফুলবাড়ীয়া, জেলা : ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : আমার গাভীকে বীজ দেয়া হয়। কিন্তু বীজ দেয়ার ২১ দিন পর আবার গরম হয়। এভাবে দুইবার বীজ দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
উত্তর : যদি দেখা যায় বীজ দেয়ার ২১ দিন পর আবার গরম হচ্ছে তাহলে বীজ দেয়ার ২ ঘণ্টা আগে ২.৫ সিসি ওভুরেলিন ইনজেকশন ঘাড়ের মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। আর বকনার ক্ষেত্রে ২.৫ সিসি ওভুপ্রোস্ট ইনজেকশন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। আশা করি আপনার সমস্যাটি দূর হয়ে যাবে।
মো. কাশেম, গ্রাম : বিষ্ণুগ্রাম, উপজেলা : পাইকগাছা, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : আমি এ মৌসুমে পুকুরে মাছ ছাড়তে চাই। তবে আমি কি মাছ চাষ করলে লাভবান হব?
উত্তর : আপনি স্বল্প সময়ে লাভবান হতে চাইলে থাই কই, মনোসেক্স তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি এবং গিফট তেলাপিয়া চাষ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার কাছের উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করে হাতে কলমে আরো বেশি প্রশিক্ষণও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি অনেক লাভবান হবেন।
নাজমুল করিম, গ্রাম : বালাগ্রাম উপজেলা : জলঢাকা, জেলা : নীলফামারী
প্রশ্ন : পুকুরে শোল মাছ চাষ করতে চাই। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলে উপকৃত হব?
উত্তর : পুকুরে শতকপ্রতি ১ কেজি করে চুন প্রয়োগ করে তারপর পুকুরে পানি ঢুকাতে হবে। পানি ঢুকানোর ১ সপ্তাহ পর পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। শোল মাছের রেণু পোনা আমরা সাধারণত হ্যাচারি থেকে পাই না। শোল মাছের প্রজনন সাধারণত পুকুরেই হয়ে থাকে। একক চাষের জন্য শতকপ্রতি ১০টি মাছ এবং মিশ্র চাষের জন্য শতকপ্রতি ৪টি করে দেয়া যেতে পারে। খৈল বা চালের কুড়া দিয়ে বানানো খাবার সাধারণত শোল মাছ খায় না। ছোট মাছই এর প্রধান খাবার। পোনা মাছের প্রিয় খাবার শুঁটকির গুঁড়া ভালোভাবে পিষে দিতে হয়। আর বড় মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ যেমন পুঁটি, চান্দা এগুলো দেয়া যেতে পারে। তবে মরা টাটকা মাছ খেতে দিলে এরা খায়। কিন্তু পচা মাছ এরা খায় না। এছাড়াও এরা খাবার হিসেবে কেঁচো ও ব্যাঙ খায়। বাগদা চিংড়ির মাথাও শোল মাছের প্রিয় খাবার। যে পুকুরে শোল মাছ চাষ করবেন সেই পুকুরে কচুরিপানা অথবা কলমিলতা থাকলে ভালো কারণ শোল মাছ আড়ালে আবডালে থাকতে পছন্দ করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কচুরিপানায় পুকুর ভরে না যায়। পুকুরের চারদিকে কমপক্ষে ৫ ফুট উচ্চতায় জাল দিয়ে বেড় দিতে হবে। অন্যথায় বর্ষাকালে মাছ বের হয়ে যাবে। এভাবে শোল মাছ চাষ করলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন।
কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন*
*উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এল আর, সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ suman_arefin@yahoo.com